দেশের প্রাণিবিজ্ঞান গবেষণার নতুন এই সাফল্য এল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম এ বাশারের হাত ধরে। ২৫ বছর ধরে প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা করা এই প্রবীণ অধ্যাপক ও তাঁর দলকে এ জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৫টি বছর। স্বর্ণবিহনকে তো বন থেকে এনে ছেড়ে দিলেই এরা ডিম পারবে না। ডিম থেকে লার্ভা স্তর পেরিয়ে প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়াবে না। এর জন্য প্রয়োজন তাদের ডিম পাড়ার উপযুক্ত ঈশ্বরমূল লতা। তার খাদ্যের জোগান দেবে এমন বুনো বৃক্ষের সারি। আর উড়তে উড়তে ক্লান্ত হলে দরকার ফলদ বৃক্ষের ছায়াশীতল পরশ।
প্রজাপতিদের মধ্যে সবচেয়ে সংবেদনশীল এই প্রজাতির জন্য তিন স্তরের উদ্ভিদের সারি রোপণ করতে হয়েছে এম এ বাশার ও তাঁর দলকে। ওই উদ্ভিদগুলোতে ১৫ বছর ধরে লালন-পালন করে বড় করতে হয়েছে। স্বর্ণবিহনের বেঁচে থাকার জন্য ২২ থেকে ৩০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা থাকতে হয়। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওই কেন্দ্রেই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম জলাশয়। কার্জন হলের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পাশে ১০০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রস্থের ওই জার্মপ্লাজম কেন্দ্রেই রয়েছে ১২০ প্রজাতির উদ্ভিদ। এসবই স্বর্ণবিহনের দ্বিতীয় প্রজন্ম আসার পথ খুলে দিয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকারের এই প্রজাপতি পুরো পাখা মেললে আয়তন হয় ২০-২২ সেন্টিমিটার।
অধ্যাপক আবুল বাশার এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি গবেষণা সহায়তা তহবিলের আওতায় তিনি এই গবেষণাটি করছেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে শহরের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করে কীভাবে স্বর্ণবিহনের মতো বিলুপ্তপ্রায় প্রজাপতির প্রজনন ঘটানো। এই প্রথম ধাপ সাফল্যের সঙ্গে শেষ করতে পারার তৃপ্তি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি দেশের প্রতিটি জেলা শহরে এভাবে প্রজাপতিদের অভয়াশ্রম তৈরি করতে পারি, তাহলে মানুষের উপকারই বেশি হবে।’
আবুল বাশারের গবেষণায় দেখা গেছে, স্বর্ণবিহন প্রজাপতি একসময় দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও মধুপুরের বনে ছিল। কিন্তু প্রজাতিটি খুবই সংবেদনশীল। শব্দ এবং পরিবেশদূষণ হলে এরা টিকে থাকতে পারে না। এর কারণে এটি এখন শুধু সিলেটের সাতছড়ি ও রেমাকেলেঙ্গা বনে দেখা যায়। বাকি এলাকাগুলো থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে কৃত্রিমভাবে পরিবেশ তৈরি করে স্বর্ণবিহনের প্রজনন ঘটিয়ে তা বনে ছাড়লে বনের পরিবেশকে আরও স্বাস্থ্যকর করবে।
ইফতেখার মাহমুদ | প্রথম আলো

Previous Article

Post a Comment