পৃথিবীতে পিঁপড়ের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার ট্রিলিয়ন। 'পিঁপড়ে মানব' বলে খ্যাত প্রতঙ্গ বিজ্ঞানী ড. উইলসন বলেছেন, 'পিঁপড়েদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে ধ্বংস করে ফেলত পৃথিবী। ড. উইলসন পৃথিবী ভ্রমণ করে প্রায় ৫০০ প্রজাতির পিঁপড়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন। কিছু কিছু পিঁপড়ে তিনি প্রত্যেক্ষ করেছেন যেসব পিঁপড়ে পাথর ছুড়তে পারে শত্রুর দিকে, কোনোটি উঁচু গাছে মগডালে বাসা বাঁধে শামিয়ানার মতো করে, কোনোটি আবার মধু লুকিয়ে রাখে পেটের থলেতে। এরা বিপদে পড়লে তীক্ষ্ন চিৎকার দেয়, যেমন রেড হারভেস্টার অ্যান্ট। চিমটে দিয়ে এগুলোকে ধরার চেষ্টা করলে সাহায্যের জন্য এরা বিশ্রী চিৎকার ছাড়ে। পিঁপড়ে গবেষক ড. উইলসন জানান, পিঁপড়েরা বেশিরভাগ সময়ই অন্যের আস্তানায় হামলা করে। শুধু তাই নয়, কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'আমাজন অ্যান্ট'রা এমনকি তাদের শত্রুপক্ষকে ক্রীতদাস পর্যন্ত বানিয়ে রাখে। উজ্জ্বল লাল-রঙের আমাজান অ্যান্টরা ধারালো তরবারির মতো চোয়াল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভিন্ন প্রজাতির প্রতিপক্ষের ওপর। তারপর শত্রুর বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে পালিয়ে যায়। গুটি থেকে শত্রু-পিঁপড়ের বাচ্চাগুলো বড় হলে তারা আমাজান অ্যান্টদের ক্রীতদাসে পরিণত হয়। পিঁপড়েরা সাধারণত নিজেদের সম-আকৃতির পতঙ্গের আক্রমণ চালালেও মানুষের জন্য কখনো কখনো এরা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ফায়ার অ্যান্ট নামে দক্ষিণ আমেরিকায় এক ধরনের পিঁপড়ে আছে। এগুলো কামড় দিয়ে গরুর বাছুর কিংবা মানবশিশু মেরে করে ফেলতে পারে। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ৯,৫০০ প্রজাতির পিঁপড়ের সন্ধান পেয়েছেন। উইলসনের মতে ওপরের সংখ্যারও তিনগুণ প্রজাতির পিঁপড়ে সম্ভবত আজো অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেছে।
০ পিঁপড়ে হচ্ছে সামাজিক পোকা। দলবল ছাড়া চলতে পারে না। তাই সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে লাইন ধরে চলে চলাচল করে।
০ রানী পিঁপড়ের পাখা থাকে। কর্মী পিঁপড়া সবসময় কাজ করে। ওদেরও পাখা গজায় তবে সেটা অনেক দেরিতে অর্থাৎ ওদের মৃত্যুর কিছুটা আগে।
লাল পিঁপড়ের হুলে থাকে ফরমিক অ্যাসিড। তাই লাল পিঁপড়ে কামড় দিলে জ্বালা করে। লাল পিঁপড়ের পাতন ক্রিয়ার সাহায্যে সর্বপ্রথম ফরমিক এসিড পাওয়া গিয়েছিল। লাতিন শব্দ ফরমাইকার অর্থ পিঁপড়ে। যা থেকে এই নামকরণ।
রাণীমাতা
০ পিঁপড়েদের মধ্যে কোনো রাজা নেই। তবে পিঁপড়ে কলোনিতে বেশ কিছু ছেলে পিঁপড়ে থাকে। ওদের দ্রণ বলে ডাকা হয়। সারা জীবনে খাওয়া ছাড়া ওরা আর কোনো কাজ করে না।
০ পিঁপড়েরা যেখানে বাস করে তাদের পিঁপড়ে কলোনি বলে। একটা কলোনিতে একজন রানী পিঁপড়ে, কয়েকজন ছেলে পিঁপড়ে আর অসংখ্য কর্মী পিঁপড়ে থাকে।
কলোনী দখলের যুদ্ধ
০ কর্মী পিঁপড়েরা রানী আর বাচ্চা পিঁপড়ের দেখাশোনা করে। মাঝ বয়সে ওরা বেরোয় খাবার খুঁজতে। আর শেষ বয়সে ওরা সৈনিকের দায়িত্ব পালন করে। তখন ওরা পিঁপড়ে কলোনির নিরাপত্তা বজায় রাখে।
০ এক কলোনির পিঁপড়েরা অনেক সময় অন্য কলোনি আক্রমণ করে বসে। আক্রমণ করে অন্যদের জমানো খাবার, আর বাচ্চাদের নিয়ে যায়।
কত বড় পাতা বহন করে নিয়ে যাচ্ছে
০ পিঁপড়েরা তাদের দেহের ওজনের দশগুণ বেশি ওজন বহন করতে পারে।
০ পিঁপড়ের শরীর থেকে ফেরোমোনেস (Pheromones) নামক এক ধরনের গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ বের হয়। যখন ওরা কোথাও যায় তখন সারা রাস্তায় ওটা লেগে যায়। ফেরার সময় সেই গন্ধ শুকে শুকে কলোনিতে ফিরে আসে।
মরুভূমির পিঁপড়ারা পথের প্রকৃত দূরত্ব পরিমাপের জন্য পদক্ষেপ গণনাকারী একটি অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ বা পেডোমিটার ব্যবহার করে থাকে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। গবেষকরা জানতেন যে, খাদ্যানুসন্ধানী পতঙ্গরা আকাশের আলো ব্যবহার করে পথ অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু এ পতঙ্গরা মৃত্তিকার উপরিভাগের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে সক্ষম এটা মানতে পেরে গবেষকরা বিস্মিত হয়েছেন। এ সংক্রান্ত গবেষণা 'সায়েন্স' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ক্যাটাগলিফিস ফর্টিস বা সাহারা মরুভূমির অনুসন্ধানী পিঁপড়ারা খাদ্যের জন্য সমতল বালুকাময় ভূমি পরিক্রমণ করে। এ প্রাণীদের সরাসরি পথ অতিক্রম করে বাসায় প্রত্যাবর্তনের উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রয়েছে। এ মিশন সফল করতে দিক ও দূরত্ব মূল্যায়ন করতে হয় পিঁপড়াদের। কিন্তু যখন তারা দিক-নির্দেশনার জন্য আকাশের ওপড় নির্ভর করে, তখন তারা দূরত্ব পরিমাপের জন্য কি কৌশল অবলম্বন করে তা রহস্যাবৃত।
এ রহস্য উদঘাটন করতে জার্মানির উলম ইউনিভার্সিটি এবং সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা কিছু পিঁপড়াকে একটি সোজা সুড়ঙ্গ বরাবর পাঠান। কিন্তু খাদ্যের কাছে পেঁৗছামাত্র মনে হলো তারা রণ-পা সংযোজন করে পদক্ষেপের মাত্রা কয়েক গুণ করেছে কিংবা পাগুলো আংশিক কর্তন করেছে। পিঁপড়াগুলো পরে তাদের আবাসভূমি ভিত্তিক ভ্রমণ শুরু করার জন্য একই স্থানে ফিরে আসে। অবশ্য তারা আরও দেখতে পান যে, দীর্ঘ পাওয়ালা পিঁপড়ারা তাদের বসার প্রবেশপথে ঢুকতে অতিমাত্রায় ক্ষমতা জাহির করেছে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র পাওয়ালা পিঁপড়ারা তাদের ক্ষমতার অপেক্ষাকৃত কমই জাহির করেছে।
তারা দেখতে পান যে, পিঁপড়ারা বহির্মুখী এবং বাড়িমুখী উভয় প্রকার ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাদের পায়ের ক্ষমতা অতিরিক্ত ব্যবহার করেছে। তারা এভাবে মূল্যায়ন করেন যে, বাসায় ফেরার দূরত্ব পিঁপড়ারা প্রায় নির্ভুলভাবে হিসেব করেছে। এক্ষেত্রে তাদের পদক্ষেপের দৈর্ঘ্য ছিল মূল নিয়ামক। এ সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধের লেখক উলম ইউনিভার্সিটির নিউরোবায়োলজিস্ট প্রফেসর হ্যারল্ড উলফ বলেন, এর অর্থ হচ্ছে এ প্রাণীরা তাদের পদক্ষেপ গণনা করছে-পদব্রজে দূরত্ব পরিমাপ যন্ত্রের মতো এটা ঘটছে।
সূত্রঃ মাহমুদ আহমদ,বাংলাদেশ প্রতিদিন ও অন্যান্য
ধন্যবাদ এমন সুন্দর পোস্ট করার জন্য। আমি অনেক দিন ধরে এই রকমের ছোট্ট প্রাণী পিঁপড়া সম্পর্কে তথ্য নিয়ে পোষ্ট খুঁজছিলাম। আপনার এই পোস্ট অনেক উপকারে আসবে আমার বিশ্বাস। এর আগেও একটা টিপস্ পেয়েছিলাম। এই টিপসইটও অনেক উপকারী। যার দরকার হবে দেখতে পারেন। আবারো লেখককে ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না। তবে এরকম আরো একটি লেখা পড়েছিলাম ।। এখানে> http://muktomoncho.com/archives/167
November 21, 2015 at 8:55 PM
Post a Comment