এই পোকা শুধু প্রজননের সময় বাইরে আসে,তারপর সর্বোচ্চ ৩ বছর বাঁচে। নিম্ফ পিরিয়ডের বেশীরভাগ সময়ে মাটির নীচে থাকে। ডিম থেকে এডাল্ট হওয়া পর্যন্ত এদের বয়স ১৭ হতে পারে। এরা মুখ দিয়ে শব্দ করে না, পেটের নীচে একজোড়া টিম্বাল মেমব্রেন দ্বারা শব্দ করে।
প্রায় ৯০০ প্রজাতির ঝিঁঝিঁ বাস করে আমাদের এই পৃথিবীতে। ১৫ সেকেন্ডে ঝিঁঝিঁ যতোবার ডাকছে, তার সঙ্গে ৩৭ যোগ করলেই পেয়ে যাবে দিনের তাপমাত্রা। এরা আকারে ২ থেকে ২.৫০ইঞ্চি হয়।
আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরণের ঝিঁঝিঁ পোকা দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে এক ধরনের ঝিঁঝিঁ থাকে আমাদের খুব কাছাকার্ছি, ঠিক ঘরের কোণে। এরা আকারে অতোটা বড়ো হয় না। গায়ের রংটাও হয় মেটে মেটে। যাতে ঘরের দেয়ালের একটা কোণে চুপটি করে বসে থাকতে পারে। আরেক জাতের ঝিঁঝিঁকে তোমরা পাবে ফসলের খেতে, বিশাল মাঠে অথবা বনে-বাদাড়ে। এসব ঝিঁঝিঁ আকারেও যেমন বড়ো, তাদের গায়ের রংও তেমনি কুচকুচে কালো। আর এরা ডাকতেও পারে তেমনি ভয়ংকর ভাবে। ঘরের ঝিঁঝিঁরা মানুষের জন্য খুব একটা ক্ষতিকারক না হলেও মাঠের ঝিঁঝিঁরা কিন্তু অতোটা ভালো নয়। মাঠকে মাঠ ফসল উজাড় করা এদের কাছে কোনো ব্যাপারই না।
ঝিঁঝিঁদের চোখ কিন্তু খুবই ভালো। মাছিদের মতো ঝিঁঝিঁরাও একইসাথে অনেক দিকে দেখতে পায়। তার চেয়েও মজার ব্যাপার আছে ঝিঁঝিঁদের শ্রবণেন্দ্রিয় বা কানে। ঝিঁঝিঁরা কিন্তু শুনতেও পায় খুব ভালো। ঝিঁঝিঁদের কান থাকে ঠিক হাটুর মাঝামাঝিতে, হাঁটুর যে জায়গাটাকে বলা হয় মালাই চাকি সেই জায়গায়।
পৃথিবীর অনেক দেশেই ঝিঁঝিঁরা কিন্তু সৌভাগ্যের প্রতীক। ইউরোপের অনেক দেশেই মনে করা হয়, ঘরে বসেই ঝিঁঝিঁর ডাক যারা শুনতে পায়, তারা খুবই ভাগ্যবান। এমনকি অনেক দেশে ঝিঁঝিঁকে আদর করে খাঁচায় পুরে নিয়মিত দানাপানি দিয়ে রীতিমতো যত্নআত্তি করা হয়। অনেকটা আমাদের দেশের পাখি পোষার মতো। এটা নাকি তাদের ঘরে সৌভাগ্য বয়ে আনবে। এই দৃশ্য দেখতে বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি দূরেও যেতে হবে না তোমাদেরকে। আমাদের এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই অনেক দেশেই এমনটি দেখতে পাওয়া যায়। তবে পৃথিবীর সবদেশেই যে ঝিঁঝিঁদের দিন এমন আদর আপ্যায়নে কাটে তা কিন্তু নয়। দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশেই ঝিঁঝিঁর ডাক শুনতে পাওয়াটাকে মৃত্যুর আগমন ধ্বনি হিসেবে ধরা হয়। ঝিঁঝিঁ তাই তাদের কাছে অমঙ্গলের প্রতীক। আফ্রিকার দেশগুলোতে আবার ঝিঁঝিঁ পোকা ধরা হয় আয়েশ করে খাওয়ার জন্য। তোমরা নিশ্চয়ই মনে মনে কল্পনা করছো, আফ্রিকার গহীন অরণ্যে একদল মানুষ ঝিঁঝিঁর রোস্ট বানিয়ে গপগপিয়ে খাচ্ছে। তোমরা যাই মনে করো না কেনো, ঝিঁঝিঁ যে খুবই উপাদেয় আর পুষ্টিকর, নানান দেশের নানান মানুষের খাদ্যাভ্যাস তাই প্রমাণ করে।
Post a Comment