ফড়িং


ফড়িং দেখতে নিরীহ দর্শন হলেও এর জীবনাচরণ অনেক জটিল। অনেক আগে ফড়িংকে ক্ষতিকর আর বিষাক্ত মনে করা হতো। কিন্তু ফড়িং ক্ষতিকরও নয়, বিষাক্তও নয়। প্রকৃতির অতি চঞ্চল এক প্রাণী। ফড়িং সবার প্রিয় তার সৌন্দর্যের কারণে। অতি সুন্দর এই প্রাণীটি কিন্তু হিংস্রও। ফড়িংয়ের এই হিংস্রতার প্রকাশ পায় তাদের সঙ্গী নির্বাচন ও প্রেমের সময়। ফড়িং খোলা বাতাসে আলোকোজ্জ্বল স্থানে উড়ে উড়ে সঙ্গিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পছন্দ করে। প্রেমের ঘনিষ্ঠতার সময় পুরুষ ফড়িং শক্তি প্রয়োগে দারুণ উত্সাহী হয়ে ওঠে। নারী ফড়িংয়ের সামনে এসে সে শরীরে এমন এক আকুতি ফুটিয়ে তোলে, ওড়ার ভঙ্গিতে এমন সব অঙ্গভঙ্গি ও ভান করে যে নারী ফড়িং একপর্যায়ে সাড়া না দিয়ে পারে না। কিন্তু কাছ থেকে দেখলে তাদের এই মনোহর প্রেমকে মনে হবে মারাত্মক খুনোখুনি ঘটে যাচ্ছে।
ফড়িং বিবর্তিত হয়েছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর ধরে। এই লম্বা সময় ধরে তাদের শরীরে নানা পরিবর্তন হয়েছে। প্রেম-মিলনের একান্ত নিজস্ব চরিত্র তারা পেয়েছে। ফড়িং তার জীবন বৈচিত্র্যের কারণেই প্রকৃতিতে এক বিস্ময় হয়ে আছে। বিজ্ঞানীরা এমন শান্ত ও নিরীহ প্রাণীর প্রেমের সময় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠার বিষয়টি গবেষণা করে দেখেছেন, কিন্তু এর কোনো সমাধান খুঁজে পাননি। ধারণা করা হয়, তাদের শরীরের নানা রং আর প্রজাতিগত বৈচিত্র্য ও বৈষম্যই এর কারণ। কাছ থেকে তাদের এই ঘনিষ্ঠতা লক্ষ করলে দেখা যায়, তারা সত্যিই হিংস্র আচরণ করছে। দেখা গেল, কোনো একটা নারী ফড়িং বাতাসে রোদ পোহাচ্ছে, তখনই অন্য কোনো এক পরাক্রমশালী পুরুষ ফড়িং প্রেম প্রকাশে প্রবল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ল। মানুষের মতো ঈর্ষাও প্রবল এদের মধ্যে, প্রায়ই ঘনিষ্ঠ জুটি আচমকা আক্রমণের শিকার হয় অন্য ঈর্ষাকাতর পুরুষ ফড়িংয়ের। প্রচণ্ড বেগে উড়ে এসে পুরুষ ফড়িংটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আক্রমণকারী। নারী ফড়িং সব সময়ই পুরুষের এই বর্বর আচরণ এড়িয়ে চলতে চায়। এই সময়ে নারী ফড়িংয়ের পেটে যদি ডিম থাকে, তাহলে এই জোরপূর্বক প্রেম তার জন্য কষ্টকর হয় এবং অনেক সময় মৃত্যুর কারণও হয়ে ওঠে। পুরুষ ফড়িং ঘনিষ্ঠ হওয়ার আশায় প্রচণ্ড জোরে উড়তে থাকে, বাতাসে চক্কর কাটতে থাকে, তেড়ে যায় অন্য ফড়িংয়ের দিকে। এই খুনে-আচরণে নারী ফড়িং শঙ্কিত হলেও গর্ভের পূর্ণতার জন্য একাধিক পুরুষ ফড়িংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করতে হয়। তবে পুরুষ ফড়িং সব সময় হিংস্র আচরণ করে না। মাঝেমধ্যে গভীর প্রেম-পরবর্তী দীর্ঘ সময়ে পুরুষ ফড়িংয়ের লেজ কামড়ে ধরে নারী ফড়িংটি উড়তে থাকে। তখন তাদের কল্পনা করা যেতে পারে দূরদিগন্তে অবাধ সাঁতার দেওয়া দুই প্রেমিক-প্রেমিকা। এই উড়ালযাত্রায় নারী ফড়িং সবচেয়ে নিরাপদ বোধ করে। নারী ফড়িং ডিম পাড়ে পানিতে। একটি ফড়িং বেঁচে থাকে প্রায় ছয় মাস।

সালাহ্ উদ্দিন
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন


0 Responses to "ফড়িং"

Post a Comment

 

Sponsor

Return to top of page Copyright © 2010 | Flash News Converted into Blogger Template by HackTutors